হামজা রহমান অন্তর:
কথিত সিঙ্গাপুরের পাশের উপশহর দৌলতখানে টানা ২৯ ঘন্টা লোডশেডিং, ৩৬ ঘন্টা হয়ে গেছে এখনো নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাই নি। ১০ মিনিট, ১৫ মিনিট এমন করে সর্বমোট ২ ঘন্টাও পাইনি।
জননেত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ বহু আগেই বিদ্যুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ। তার উপর দ্বীপজেলা ভোলা নিজের ৩২ মেগাওয়াট ডেডিকেটেড বিদ্যুৎকেন্দ্রের মাধ্যমে নিজেদের চাহিদা মিটিয়েও সারাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে জাতীয় গ্রিডে। আমাদের পাশের উপজেলাগুলো ভোলা সদর, বোরহানউদ্দিনে তাই এই লোডশেডিং সমস্যা নেই। ২০ ঘন্টার বেশি বিদ্যুৎ থাকে ঘূর্ণিঝড়সহ, যেকোনো ঝড়-বৃষ্টির মধ্যেও। আর অন্য সময়ে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ থাকে। এমনকি বাংলাবাজার নামক বিশেষ আশীর্বাদপুষ্ট জায়গাটি কোনো উপজেলা/থানা/পৌরসভা না হওয়া সত্ত্বেও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পায়, পল্লিবিদ্যুতের মেইন অফিসটাও সেখানে।
২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মান নাৎসিবাহিনী ইহুদিদের “holocaust” এর মুখোমুখি করেছিলো। প্রথমে ক্যাম্পে/ঘেট্টোতে ধরে নিয়ে গিয়ে তাদের বাইরে যাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা দিতো নাৎসিরা। তারপর খাবার তালিকায় কার্বোহাইড্রেট ও প্রোটিন বাদ দিয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে দূর্বল বানিয়ে একটু একটু করে মেরে ফেলতো। এতে অনেক ইহুদি মারা যেতে, বাকিদের হাড্ডিসার অবস্থা। এরপর যারা বেঁচে থাকতো তাদের বাধ্যতামূলক শ্রমিক হিসেবে পাঠানো হতো নাৎসিদের কারখানাগুলোতে। সেখানে ২৪ ঘন্টা খাটানো হতো। বেশিরভাগ মারা যেতে এভাবে। এরপরও যারা বেঁচে থাকতো তাদের গ্যাসচেম্বারে ভরে বিষাক্ত গ্যাসে মেরে ফেলতো “final solution” হিসেবে। এই গ্যাসচেম্বারে লাইন ধরে নিয়ে যাবার পথটার নাম দিয়েছিলো নাৎসিরা “road to heaven”.
আমরা দৌলতখানবাসীরাও এমন এক স্বর্গে আছি, যাদের “চূড়ান্ত সমাধান” হলো বাংলাবাজার নামক জায়গাটাতে বিলীন হয়ে যাওয়া। যেখানে খুব পরিকল্পিত উপায়ে আমাদের দৌলতখানে থাকতে নিরুৎসাহিত করা হয়। দৌলতখানকে বর্তমান জায়গা থেকে তারা স্থানান্তরিত করতে চায় বাংলাবাজার নামক অখ্যাত কিন্তু বিশেষ আশীর্বাদপুষ্ট জায়গাটিতে। কারা এসব করে তা দৌলতখানবাসী খুব ভালো করে জানে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো রিপোর্ট নিলে অনেক লোমহর্ষক তথ্য চলে যাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর টেবিলে। যারা দৌলতখানকে রক্ষা করতে চায় না, যারা দৌলতখানের উন্নয়নের বিরোধী, যাদের অপকর্মের বিরুদ্ধে কথা বললে বাসার বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তারা দায়ী। এক ইশারায় বাসার বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়, বিদ্যুৎ অফিসে তো তাদের ব্যাপক প্রভাব বোঝাই যাচ্ছে! তাহলে তারা চাইলেই তো দৌলতখানে বিদ্যুতের এই দুরবস্থা দূর হয়। কিন্তু তারা চাইবে না, কারন দৌলতখানের মানুষ প্রতিবাদ করতে ভুলে গেছে।
একবার সবাইকে নিয়ে জেগে উঠেছিলাম দৌলতখান থেকে দক্ষিণে বোরহানউদ্দিন পর্যন্ত নদীভাঙনের প্রতিবাদে, স্থানীয় অনেক নেতাই একাত্তরের রাজাকারের মতো বেইমানি করেছে, পাশে থেকেছিলো সাধারণ মানুষ, আর মমতাময়ী নেত্রী শেখ হাসিনা। এখন আবার উত্তর দিকে ভোলা সদর পর্যন্ত নদী ধেয়ে আসছে দৌলতখানের মূল উপশহরে, প্রয়োজনে আবারও সাধারণ মানুষ নিয়ে মাঠে নামবো নদীভাঙন ঠেকাতে, বিদ্যুতের দাবীতে। সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার উন্নয়ন থেকে আমাদের কেউ বঞ্চিত করার ষড়যন্ত্র করে দাবায়ে রাখতে পারবে না। আজকের যারা ছোটখাটো জনপ্রতিনিধি হয়ে বড় চেয়ারের চামচামি করছে, এই দৌলতখান না থাকলে তারা নেতাগিরিটা কোথায় করবে? বাংলাবাজারে? সেখানে তাদের ক্রীতদাসের মর্যাদাও দেবে না।
“এই পৃথিবী কখনো খারাপ মানুষের খারাপ কর্মের জন্য ধ্বংস হবে না, যারা খারাপ মানুষের খারাপ কর্ম দেখেও কিছু করেনা তাদের জন্যই পৃথিবী ধ্বংস হবে।” – অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের এই উক্তিটির মতোই দৌলতখানের এই দুরবস্থার জন্য সবার সম্মিলিত নীরবতাই দায়ী। আমার এই লেখাটার জন্য অত্যাচারী দানব আবার হয়তো ঝাপিয়ে পড়তে পারে আমার ও আমার পরিবারের উপর। কিন্তু তবুও আমি দৌলতখানের সকল সৎ লোকের ঘুম ভাঙানোর চেষ্টা করে যাবো। জানিনা কবে আবার তাদের ঘুম ভাঙাতে পারবো। জানিনা বেঁচে থাকবো কিনা, নেত্রী এসে দেখে যাক আমাদের। নেত্রীর কাছে হয়তো গোপন করতে পারবে, কিন্তু খোদা যদি থেকে থাকেন, তার কাছে তো কিছুই গোপন থাকে না, তিনি বিচার করবেন একদিন।
লেখকঃ সহ-সভাপতি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ।